তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন - মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা।
আরো পড়ূন নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
তুলসী গাছ এমন একটি ঔষধি গাছ। যা বহু রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
আপনাদের অনেকের হযতোবা প্রশ্ন থাকতে পারে যে, তুলসী গাছের উপকারিতা বা এর
বৈশিষ্ট্য কি? তাই আমি তুলসী গাছের বৈশিষ্ট্য বা তুলসী গাছের সম্পর্কে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি ।এবং তুলসী পাতার ঔষধি গুনাগুন ও মধু ও তুলসী পাতার
উপকারিতা কি এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি তাই তুলসী পাতার উপকারিতা
সম্পর্কে জানতে চাইলে নিম্নে ভালোভাবে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ,
আপনারা জানলে অবাক হবেন যে, তুলসী গাছের উপকারিতা বা এর কার্যকারিতা অনেক। তাই
আশা করি আমরা নিচে যে টপিক নিয়ে আলোচনা করেছি আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়েন
তাহলে আশা করি অবশ্যই উপকৃত হবেন। ইনশাআল্লাহ।
ভূমিকাঃ
তুলসী পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। সুস্থতা থাকার জন্য প্রতিনিয়ত
কয়েকটি তুলসীর পাতা চিবিয়ে কিংবা বেটে রস করে খেয়ে নিন। শিশু কিশোর বয়স্ক
সকল লোকের জন্য ঠান্ডা,সর্দি, কাশ, শ্বাসকষ্ট, ইত্যাদি রোগের প্রতিরোগ হিসেবে
বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতা।
বেশিরভাগ দেশ গুলিতে মানসিক প্রশস্তির কারণে একটি অসাধারণ ঔষধ হিসেবে বিশেষ
ভাবে কার্যকর করা হয়। তুলসীতে রয়েছে ভিটামিন সি, এন্টি ইনফ্লেম টরি ও
অন্যান্য এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা মানসিক প্রশান্তি ও চাপমুক্ত করতে সাহায্য
করে।
তুলসী পাতার বৈশিষ্ট্য
তুলসী গাছ এমন একটি ঔষধি গাছ। যার শিখর, বাকোল পাতা, এবং বীজ, সোব কিচুই অতি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তুলসী গাছ ঔষধি গুণে বিভিন্ন রোগের ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
যেমনঃ
- মার্কেটিংজ্বর, সর্দি,কাশি, ফুসফুসে দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, হাঁপানি, কৃমি, এবং ঘামছি, ইত্যাদি।
এরকম বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা রয়েছে তুলসী গাছে।
মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা
মধু এবং তুলসীর এ দুটি পাতার মিশ্রণ বহু গুনাগুন রয়েছে। স্বাস্থ্য ঠিক রাখার
জন্য বা রোগ জীবাণু থেকে নিজেকে, সুরক্ষিত রাখার জন্য অনেকেই মধু, এবং তুলসির
পাতার, মিশ্রণ নিয়মিত সেবন করে থাকে।
আপনি প্রতিনিয়ত সকালে একটি কাপে ৮ থেকে ১০ টি তুলসী পাতা পরিষ্কার পানি
দিয়ে ধুয়ে নিন, এবার এক টেবিল চামচ মধু নিন।এ দুটি উপাদান খুব ভালোভাবে
মিশ্রণ করে নিন। এবং খালি পেটে খেয়ে নিন। জীবন যাপন বিষয়ক সাইট সুন্দর এবং
মুসলিন করতে মধু এবং তুলসীর পাতার মিশ্রণ আমাদের শরীরের জন্য অতি
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় মধু ও তুলসী পাতাঃ
মধু ও তুলসির পাতায় রয়েছে পুষ্টি ও ভিটামিন। এটি মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই সর্ব রোগের প্রতিরোগ হিসেবে কয়েকশো বছর ধরে স্বীকৃতি
রয়েছে মধু ও তুলসীর মিশ্রন।
ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে মধু ও তুলসীর মিশ্রণঃ
তুলসী এবং মধুর মিশ্রণ ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা দেয়। এবং বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস
আক্রমণের হাত থেকে মানব দেহকে সুরক্ষা দেয়।
কাশি কমাতে মধু ও তুলসীর মিশ্রণ অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানঃ
তুলসীর রস হালকা গরম করে খেলে কাশি খুব দ্রুত কমে যায়। এছাড়াও নিজে তৈরি
করে নিতে পারেন তুলসী এবং মধুর মিশ্রণ এটি শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাকে দূর করে
খুব দ্রুত।
হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখে তুলসী এবং মধুর মিশ্রণঃ
মধু এবং তুলসী মানব শরীরে কোলেস্টেরোলের মাত্রাকে অনেক কমায় এবং রক্ত
সঞ্চালন বাড়ায় এ উপাদান হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখতে কাজ করে থাকে। এছাড়াও
কণ্ঠনালীর স্বর ঠিক রাখার জন্য অনেকেই মধু ও তুলসীর পাতার মিশ্রণ খেয়ে থাকে।
কিডনিতে পাথর থেকে সুরক্ষার জন্য মধু ও তুলসির পাতার মিশ্রণঃ
মধু ও তুলসী মিশ্রণ কিডনিতে পাথর দূর করতে সাহায্য করে।এবং কিডনিকে সুরক্ষিত
রাখে।
তুলসী পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম
আপনারা হয়তোবা জেনে থাকবেন যে, তুলসী গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম হলঃ
Ocimum Tenuiflorum - ওসিমাম টেনুইফ্লরাম। বা আরেকটি নাম হলঃOcimum Sanctum linn ইংরেজি নামঃ- Hoiy Basil.
তুলসী অনেক ছোট একটি উদ্ভিদ, এবং সুগন্ধযুক্ত উদ্ভিদ। এটি দুই থেকে তিন ফুট
পর্যন্ত উচ্চতা হয়ে থাকে। এই উদ্ভিদের ফল গোল আকৃতির হয়ে থাকে। এবং পেকে
লাল হয়ে যায়। এবং শীতকালে ফুল ও ফল হয়ে থাকে।
রাম তুলসী পাতার উপকারিতা
রাম তুলসী গাছ এমন একটি সুগন্ধি যুক্ত গাছ। এইগাছের উচ্চতা ৫ থেকে ১০ফুট
লম্বা হয়ে থাকে।এই গাছের পাতা দুই থেকে তিন ইঞ্চি হয়ে থাকে। ডিম্বাকৃতির ও
আরির মতো দাগ কাটার মত দাগ রয়েছে। রাম তুলসী গাছের পাতার রং হয়ে থাকে,
গোলাপি ও লাল বর্ণের হয়ে থাক, এবং এর ফল হয়,ছোট গোলাকার । রাম তুলসী গাছের
বীজ হয় কালো। যার ফল তোকমে বা তোকমা নামে পরিচিত। বা শরবতই তকমি নামে
পরিচিত। রাম তুলসী গাছের বর্ষাকাল ও শীতকাল ফুল ও ফল হয়। আর এই সময়ে পাতা
বীজ ও রস ব্যবহার হয়।
রাম তুলসী গাছের পাতার উপকারিতাঃরাম তুলসী গাছের পাতা বহু রোগ
প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে। রাম তুলসী গাছের পাতা মস্তিষ্ক ও ফুসফুস রোগের
বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। হৃদপিন্ডের শক্তিবদ্ধক এবং লিভার ও প্রতিবন্ধিকতা।
দূর করে সুস্থতা প্রদান করে। মাথা ব্যথা, বাত ব্যথা, এবং ঘা জনিত রোগের
উপকারিতা রয়েছে ।
এবং আরো অন্যান্য রোগের সমাধান রয়েছে যেমন ম্যালেরিয়া চর্মরোগ এবং মশা দূর
করে। মাথা ধরা ও হৃদপিণ্ডের বেদনা থেকে মুক্তি দেয়।
বাতে আক্রমণ হলেঃ রাম তুলসী গাছের কয়েকটি পাতা একটি কাপড়ে
মুরিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ভেজানো কাপড় ব্যথার জায়গায় বেঁধে
রাখলে বাতের ব্যথা ভালো হয়। ভিফরুল কামড়ালেঃ রাম তুলসীর পাতা রস কামড় দেয়া
স্থানে লাগালে যন্ত্রনা বা ব্যথা দূর হয়।রাম তুলসীর গাছ পরিপক্ক হওয়ার সময়
কালঃ রাম তুলসী গাছ পরিপক্ক তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস।
শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়াম
বয়স এবং স্বাস্থ্যের বিবেচনা করে সেবন করবার নিয়মঃ একটি শিশুকে
নতুন কোন উপাদান খাওয়ানোর আগে বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার ডক্টরের
পরামর্শ নেওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিটি শিশুর সংবেদনশীল ইমিউন
সিস্টেম রয়েছে এবং নতুন পদার্থের কারণে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে
পারে।
বয়সের পরিমাণঃ বিশেষ করে শিশুদের জন্য তুলসী পাতার ব্যবহার
পরিমান মত খাওয়ানোই উচিত।
রূপচর্চায় তুলসী পাতার উপকারিতা
আমাদের দেশে তুলসির পাতার রস মধু দিয়ে খাইনি এমন লোক খুবই কমই রয়েছে।
ঠান্ডা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তুলসির ব্যবহার বহুদিনের। এগুলো
ছাড়া তুলসীতে রয়েছে অনেক গুণাগুণ বা উপাদান বিশেষ করে রূপচর্চায়র
ক্ষেত্রে।
আপনের গালে লাল রঙের পিম্পল বা ফুলে যায় তাহলে, অবশ্যই তুলসী গাছ থেকে
কয়েকটি তুলসীপাতা বৃটেনেন একটি চন্দন বাটা বা নিম পাতা বাটা এসব উপাদান
মিশিয়ে লাগিয়ে রাখুন। খুব তাড়াতাড়ি পিম্পুলের বা ফোলা অংশ সেরে যাবে।
পিম্পল গোলে যাওয়ার পর দাগ থেকে যায়, তাহলে? তুলসী বাটার সাথে
একটু মিশে নিন হালকা একটু বেসন।এ দুটো উপাদান খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এবং
মুখে লাগিয়ে নিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট।ব্যবহারে কিছুদিন পরেই, আপনার স্কিনের দাগ
চলে যাবে। এবং স্ক্রিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে।
আপনার স্ক্রিনে যদি সাব সাব দাগ পড়ে থাকে তাহলে,কোন চিন্তা নেই? তুলসী বাটার
সঙ্গে এক থেকে দুটি ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে মিক্স করে আপনার মুখে লাগিয়ে
দিন ২০ মিনিট পর্যন্ত স্ক্রিনে রেখে দিন। এরপর খুব ভালোভাবে মুখের দাগ খুব
ভালোভাবে ঘষে ঘষে দূর করুন।
আপনার ঠোঁটে যদি জালা করে বা স্ক্রিনে যদি জালা করে,তাহলে তুলসীর মিশ্রণ
স্ক্রিনে ভালো ভাবে লাগিয়ে নিন তাহলে মুখের জ্বালা পোড়া কমে যাবে এবং লালচে
ভাব থাকলে সেটাও চলে যাবে।
তুলসী পাতা চুলের যত্নেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। আপনার চুলে তেল দেওয়ার
আগে, তেলের সাথে তুলসির রস খুব ভালো ভাবে মিশ্রণ করে নিন। চুলে লাগিয়ে রাখলে
চুলে খুশকি বা চুলকানি এবং চুল পড়া নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। শুকনো
আমলকির গুরো এবং তুলসী পাতার গুরো ভালোভাবে মিক্স করে নিন। সারারাত ভিজিয়ে
রাখুন পরের দিন, সকালে আপনার চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। আপনি নিয়মিত প্রয়োগের
ফলে আপনার চুল পাকা অনেক অংশে কমে যাবে।
আপনার স্কিনকে উজ্জ্বলতা করতে লাগবে ১০ থেকে ১৫ টি তুলসীপাতা ও এক চা চামচ
গুঁড়ো দুধ। তুলসী পাতা খুব ভালোভাবে বেটে নিন ,এবং তুলসী পাতার বেটের সঙ্গে
দুধ খুব ভালোভাবেই মিক্স করে নিন। খুব ভালো করে ঘটে ঘন করে নিন। এবার এই
উপাদানটি, মুখে লাগিয়ে রাখুন ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে
আপনার স্কিন খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
দুধের ভিতরে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকার কারণে আপনার স্কিন সঙ্গে সঙ্গেই অনেক
উজ্জ্বলতা দেখা দিবে। আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন। যেকোনো
ধরনের স্কিনে এই উপাদানটি ব্যবহার করা যাবে।
আপনার মুখে ব্রণ কমাতে তুলসী গুণত মান অনেক রয়েছে। এর জন্য লাগবে ১০ থেকে ১৫
টি তুলসী পাতা, এবং ১০ থেকে ১২ টি নিমপাতা, একচা চামচ চন্দন গুঁড়ো ও
গোলাপজল। তুলসী পাতা ও নিমপাতা খুব ভালোভাবে মিক্স করে নিন। এবার ভালো করে
বেটে নিন। এ উপাদানের ভিতরে এরপরে পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিক্স করে নিন যাতে ঘন
হয়।
এরপরে আপনার পুরো স্কিনে মেখে নিন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এরপর পরিষ্কার
পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা
থেকে সমাধান পাবেন।
লেখক এর মন্তব্যঃ
একটি তুলসী গাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগমুক্ত হচ্ছে, যা আমার কাছে খুবই
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে হয়েছে। তাই এই কথাই বলব যে, তুলসী গাছের বিষয়ে বা
এর ঔষধি গুনাগুন সকলের কাছ, পৌঁছে যাওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ।
তাই আপনাদের কে একটি কথাই বলবো যে, তুলসী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে সকলের জানা
প্রয়োজন। তাই আপনারা আপনাদের বন্ধু-বান্ধবদের কাছে শেয়ার দিয়ে তুলসী গাছের
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে দিন।
আমার,এই পোস্ট পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হন। তাহলে অবশ্যই বন্ধু বান্ধব
সকলের কাছে শেয়ার দিবেন।ধন্যবাদ।
ইমরান এ আই এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url